ডেস্ক নিউজ:
রাজধানীতে গত কয়েক মাসে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে মশারির ব্যবহারও বেড়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে চিকুনগুনিয়ার জীবাণুবাহী এডিস মশার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে কয়েল ও স্প্রের ব্যবহারও। আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে এখন কয়েল-স্প্রের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন রাজধানীর গুলিস্তানসহ কয়েকটি এলাকার ব্যবসায়ীরা। তবে, মশার আক্রমণ থেকে বাঁচানোর জন্য স্প্রে ও কয়েল ব্যবহারের পরিমাণ বাড়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা করছেন চিকিৎকরা। এ প্রসঙ্গে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মশার কয়েল ও ব্যবহার যত বাড়বে. মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকিও তত বাড়বে।’
গুলিস্তানের পাইকারি মশারি ব্যবসায়ী আফজাল আতিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পাইকারি মশারি বেশিরভাই মফস্বলের ব্যবসায়ীরা নিয়ে যান। ফলে বর্ষা এলে এর বিক্রি বাড়ে। তবে এবার ঢাকার খুচরা ব্যবসায়ীরা আমাদের থেকে আগের চেয়ে বেশি মশারি কিনছেন।’
এদিকে, রাজধানীর কলাবাগান এলাকায় কয়েকটি খুচরা মশারির দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মশারি বিক্রি বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। দোকানদার ফজলে রাব্বী বলেন, ‘ইদানিং মশারি বিক্রি হচ্ছে আগের চেয়ে কিছুটা বেশি। গত কয়েকমাস আগেও সপ্তাহে তিন থেকে চারটি মশারি বিক্রি করতাম। এখন প্রায় প্রতিদিনই দুই/চারটা বিক্রি হচ্ছে।’
একই এলাকার মুদি দোকানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগের চেয়ে কয়েল ও স্প্রে বিক্রির পরিমাণও বেড়েছে। ‘আল্লাহর দান’ নামে একটি মুদি দোকানে খোঁজ নিলে দোকানদার মো. তারেক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কয়েল প্রায় সারাবছরই বিক্রি হয়। তবে, এক মাস ধরে বিক্রি কিছুটা বেশি, আর স্প্রেও বিক্রি হয় আগের চেয়ে বেশি।‘
রাজধানীর আজিমপুর এলাকায় থাকেন মোহতাসিন বিল্লাহ সুপল ও আমিনুর রহমান। তারা দু’জনেই বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা কিছুদিন আগেও রাতে মশারি ব্যবহার করতাম না। কিন্তু এখন মশা না কামড়ালেও মশারি টানাই। কারণ, কখন মশা কামড়াবে, তার তো ঠিক নেই। চিকুনগুনিয়ার ভয় থেকেই মশারি ব্যবহার করি।’
চিকুনগুনিয়ার জন্য দায়ী এডিস মশা। এই মশা তো রাতে কামড়ায় না, কামড়ায় দিনের শুরুতে ও শেষ বিকেলে। তাহলে রাতে মশারি টানালে কী উপকার পান?—এমন প্রশ্নের উত্তরে আমিনুর রহমান বলেন, ‘আসলে ভয় থেকেই মশারি টানাই। এছাড়া রাতে এডিস মশা না থাকুক, অন্য মশা তো থাকেই। ওই মশা কামড়ালেও তো অসুখ হতে পারে!’ দিনে এডিস মশা থেকে রক্ষা পেতে কী করেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দিনের বেশিরভাগ সময়ই অফিসে থাকি। ফলে সেখানে কয়েল বা স্প্রে ব্যবহার করি।’
কয়েল ও স্প্রের ব্যবহার বাড়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বেড়েছে বলে মনে করেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘মশার কয়েল ও স্প্রে দু’টোই স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। এর ব্যবহার যত বাড়বে. মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকিও তত বাড়বে। ফলে এর ব্যবহার কম করাই উচিত।’
কী কী ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে স্প্রে ও কয়েলে, এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. লেলিন বলেন, “কয়েলের ধোঁয়া থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড ও কার্বন মনোঅক্সাইড বের হয়, যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এটা গর্ভবতী নারী ও শিশুর বেশি ক্ষতি করে। সাধারণ মানুষের শ্বাসতন্ত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে। এছাড়া গর্ভপাতের মতো ঘটনাও ঘটে। শুধু তাই নয়, একটি মশার কয়েল থেকে যে পরিমাণ ধোঁয়া বের হয়, তা একশটি সিগারেটের ক্ষতির সমান।’
ডা. লেলিন চৌধুরী আরও বলেন, ‘স্প্রে এক ধরনের বিষ। স্প্রের গায়েও তা লেখা থাকে। এর ব্যবহার নিয়মমাফিক না করলেও স্বস্থ্যের অনেক ক্ষতি হতে পারে।’ ক্যান্সার, শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা, হাপানি, এলার্জি ও স্তন ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে সবাই আক্রান্ত হতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।